মানসিক প্রশান্তি, হৃদয়ের পরিতৃপ্তি, অগাধ সুখ, সকল প্রকার দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি—এগুলো ছাড়া আর কী খুঁজি আমরা? মানুষ তো এগুলোই খোঁজে। প্রকৃতপক্ষে সুখী আর পরম আনন্দঘন সুন্দর একটা মানব জীবনের কথা ভাবলে এসবের বাইরে আর চাওয়ার কিছু থাকেনা। এসব অর্জনের জন্য কেউবা ধর্মীয় উপায় অবলম্বন করেন। আবার কেউ ধর্মের তোয়াক্কা না করেই কিছু বাস্তবিক পন্থা অবলম্বন করে তা অর্জন করতে চান। তবে কেবলমাত্র একজন মু’মিন ব্যক্তিই এ’দুয়ের সফল সমন্বয় ঘটাতে পারেন যিনি নিজেকে তাঁর স্রষ্টার কাছে সমর্পণ করে দিয়েছেন। অন্য কোন উপায়ে এসবের আংশিক অর্জন সম্ভব হলেও হতে পারে। তবে পরিপূর্ণ মানসিক প্রশান্তি, হৃদয়য়ের পরিতৃপ্তি, অকৃত্রিম সুখ, সব রকম দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব কেবলমাত্র নিজেকে স্রষ্টার কাছে সমর্পণ করার মাধ্যমেই। এতোদ্ভিন্ন অন্য কোন পথ আর নেই। অনেকেই আছেন যারা সেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেয়ে সুখে শান্তিতে বেঁচে আছেন। অনেকেই আবার ব্যর্থ হয়ে দুঃখকষ্টে দিন পার করছেন। অনেকেই আছেন এ দু’দলের মাঝামাঝি পর্যায়ে; এরা নিজ প্রচেষ্টা অনুযায়ী ফল পেয়েছেন। প্রশ্ন হল, কীভাবে সেই সাফল্য অর্জন সম্ভব? চলুন দেখে নিই, কীভাবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই সাফল্য অর্জিত হতে পারে।
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন আমাদেরকে জানিয়ে দিলেন যে, যদি কেউ (হউক সে পুরুষ অথবা নারী) ঈমান আনার সাথে সাথে সৎ কর্ম করে তাহলে তিনি তাকে ইহকাল এবং পরকাল উভয় জগতেই আনন্দময় জীবন আর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করবেন। উভয় জগতেই আনন্দময় জীবন আর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দানের উদ্দেশ্যটি খুবই স্পষ্ট এখানে। আর তা হল আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন এর প্রতি আন্তরিক, অকপট, অকৃত্রিম বিশ্বাস। এমন বিশ্বাস যা বিশ্বাস স্থাপনকারীকে সৎ কর্মশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে, তাকে ইহকালে সরল সঠিক পথ দেখায় আর জান্নাতের পথে পরিচালিত করে। তিনি সকল কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে তাঁর স্রষ্টা প্রদত্ত বিধান ও দিকনির্দেশনা মেনে চলেন। জীবনে বিপদ-আপদ, সুখ-দুঃখ যা-ই আসুক না কেন, স্রষ্টা প্রদত্ত দিকনির্দেশনার অনুসরণ থেকে তিনি কখনই বিরত হন না। জীবনে যা-ই ঘটুক, সবকিছুকেই সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়ে আল্লাহ্কে ধন্যবাদ দেন তিনি। আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন কর্তৃক নির্ধারিত সিদ্ধান্তের প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ সমর্থন তাঁর মাধ্যে এমন এক চেতনার উন্মেষ ঘটায় যা তাকে আরো সৎকর্মশীল করে তোলে। তাঁর কৃতজ্ঞতা বোধ প্রতিদান প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। তিনি যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেন বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট থেকে বেচে থাকার। তবে বিপদ যদি চলেই আসে, তিনি সহিষ্ণু হন। বিপদে ধৈর্য ধারন করে পরিস্থিতি সামাল দেন তিনি। বিপদ আসে তাঁর কাছে আশীর্বাদ হয়ে। তাকে বিপদে ধৈর্যশীল হতে শেখায়। এভাবেই ধৈর্যশীলতা ছোটখাটো বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্টের আড়ালে একজন মু’মিনের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে। ফলে আল্লাহ্র অনুগ্রহ আর তাঁর পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।</br>